Tuesday, January 19, 2016

সঠিক নিয়মে নামাজ পড়ার পদ্ধতি




ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামায হলো দ্বিতীয়। কালেমার পরই উহার স্থান। আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল (সাঃ) কে উর্ধ্বাকাশে মেরাজে নিয়ে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমে মুসলিম জাতির উপর এই নামায ফরয করেছেন। ইহা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও ফজীলতপূর্ণ ইবাদত।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, তোমরা কি মনে কর, তোমাদের কারো ঘরের সামনে দিয়ে যদি একটি নদী প্রবাহিত থাকে এবং প্রতিদিন সে উহাতে পাঁচ বার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? সাহাবাগণ বললেন, তার শরীরে কোন ময়লাই বাকী থাকতে পারেনা। তিনি বললেন, এরূপ উদাহরণ হল পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ক্ষেত্রেও। এভাবে নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ নামাযীর যাবতীয় পাপ মোচন করে দেন। (বুখারী-মুসলিম)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিয়ামতের দিনে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নিবেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের ময়দানে বান্দার সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে, তা হল নামায। উহা যদি বিশুদ্ধ হয়ে যায়, তবে সে মুক্তি পেয়ে গেল ও সফলকাম হল। আর উহা যদি বিনষ্ট বা বরবাদ হয়ে যায়, তবে সে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল। (তিরমিজী)
নামায যেহেতু এত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, তাই এ নামায রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাত অনুযায়ী আদায় করতে হবে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে নামায আদায় করতে দেখ, সেভাবে নামায আদায় কর। (বুখারী)
আমরা এখানে রাসূল (সাঃ) এর নামযের পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

ফরজ নামাজ
দৈনন্দি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ । (১) ফজরের দুই রকাত। (২) জোহরের চার রাকাত। আর জুমার দিন জোহরের পরিবর্তে জুমার দুই রাত। (৩) আছরের চার রাকাত। (৪) মাগরিবের তিন রাকাত। (৫) এশার চার রাকাত ।

নামাজের ওয়াক্ত
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়  কখন শুরু হয় আর কখন শেষ হয়, হাদীসে পাকে তার সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা এসেছে। এসকল হাদীসের আলোকে বর্তমানে পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই নামাজের সময় সূচীর চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার তৈরী হয়েছে । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় কখন শুরু হয় আর কখন শেস হয় এসকল ক্যালেন্ডার থেকে আমরা যেনে নিতে পারি ।

১) নামাযের পূর্বে পরিপূর্ণরূপে অযু করাঃ
ফরজগুলো হলঃ
  •   মুখমন্ডল ধোয়া।
  •  দুই হাত কনূই পর্যন্ত ধোয়া।
  •   মাথা এক চতুর্থাংশমসেহ্‌ (ভেজা হাত বুলানো) করা ।
  •  দুই পায়ের টাকনু পর্যন্ত ধোয়া। (ক্ষেত্রবিষেসে চামড়ার মোজার উপর মসেহ্‌ করা যাবে যাকে খুফস বলা হয়।
কোরআনে বর্নিত আছেঃ হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হইবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাতের কনূই পর্যন্ত ধৌত করিবে এবং তোমাদের মাথায় মসেহ্‌ করিবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করিবে; যদি তোমরা আপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হইবে। তোমরা যদি পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেহ শৌচস্থান হইতে আগমন করে, অথবা তোমরা স্ত্রীদের সহিত সংগত হও এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করিবে এবং উহা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাতে মসেহ্ করিবে। আল্লাহ্‌ তোমাদিগকে কষ্ট দিতে চাহেন না; বরং তিনি তোমাদিগকে পবিত্র করিতে চাহেন ও তোমাদের প্রতি তাঁহার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করিতে চাহেন, যাহাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়িদা‌, আয়াত:৬)।

সুন্নত

অযুর করার সময় কিছু কাজ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আভ্যাসবসতঃ করতেন যা সুন্নি হাদিস মতে, অযুর সুন্নতের (ঐচ্ছিক কাজ) আন্তরভুর্ক্ত। যেমনঃ
  • বিসমিল্লাহ্‌ বলা।
  • দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
  • কুলি করা।
  • পানি দিয়ে নাকের ভিতর পরিষ্কার করা।
  • সমস্ত মাথা মসেহ্‌ এবং কানের সংলগ্ন স্থান মসেহ্‌ করা ।
  • হাত ও পায়ের আংগুলের মধ্যে ফাকা স্থান হাতের আংগুল দিয়ে ধোয়া।
  • দাত পরিষ্কার করা (মেস্‌ওয়াক করা উত্তম)
  • অযুর কাজগুলো তিনবার করে।

মুস্তাহাব

অযুর কিছু মুস্তাহাব কাজ (করা উত্তম, না করলেও অযু কার্যকর থাকে) আছে।
  • অযুর পর কালেমা শাহ্‌দাত পড়া।
  • অযুর দুই কাজের মধ্যে দেরি না করা।
  • অযুর সময় আহেতক কথা না বলা।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে অযু করা।
  • পানির অপচয় না করা।
ডান থেকে বামে ধারাবাহিকতার রক্ষা করে অযু করা।

২) নামাযের নিয়ত করাঃ
নামায শুরুর আগে নির্দিষ্ট নামাযের জন্য নিয়ত করা প্রত্যেক নামাযীর উপর আবশ্যক। নিয়তের স্থান হল অন্তর। মুখে উচ্চারণের মাধ্যমে নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। কেউ যদি মুখে নিয়তের শব্দগুলো বলে তাতে সমস্যও নেই। 

৩) কিবলামুখী হয়ে আল্লাহু আকবার الله اڪبر বলে দাঁড়ানোঃ
রাসূল (সাঃ) যখনই নামাযে দাঁড়াতেন, কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। তিনি বলেছেন, যখন তুমি নামাযে দাঁড়াবে, তখন পরিপূর্ণরূপে অযু করবে, অতঃপর কিবলামুখী হয়ে আল্লাহ আকবার বলবে।

৪) নাভির নিচে হাত রাখাঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে নাভির নিচে স্থাপন করতেন। (আবু দাউদ-নাসাঈ) নাভির নিচে হাত রাখাটাই ছহীহ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত। এছাড়া অন্য কোথাও রাখার হাদীছ বিশেষ করে বুকের উপর হাত রাখার হাদীস দুর্বল।

৫) ছানা পাঠ করাঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে ছানা পাঠের বিভিন্ন বাক্য প্রমাণিত আছে। সাধারণ পাঠকদের সুবিধার্থে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং সহজ দুআটি এখানে উল্লেখ করা হল। (سُبْحَانَكَ اَلَلهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَك اَسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ) উচ্চারণঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারাকাস্‌মুকা ওয়া তালা যাদ্দুকা ওয়া লাইলাহা গাইরুকা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রশংসা জড়িত পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মহানত্ব সমুন্নত। আর তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নাই

৬) সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখাঃ
নবী (সাঃ) নামায অবস্থায় মাথা সোজা রেখে যমীনের দিকে দৃষ্টি রাখতেন। তাঁর দৃষ্টি সিজদার স্থান অতিক্রম করতো না।

৭) কিরাত পাঠ করাঃ
কিরাত পাঠ করার পূর্বে রাসূল (সাঃ) নীরবে(أعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ) উচ্চারণঃ আউজু বিল্লাহি মিনাশ্‌শায়ত্বানির রাযীম এবং (بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ) উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পাঠ করতেন। অতঃপর সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। সূরা ফাতিহা পাঠ করা নামাযের রুকন। সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হবেনা।

৮) মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ জরুরী নয় :
ইমামের পিছনে মুক্তাদীগণ সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না। কারণ, কুরআনের বানী কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা হলে তোমরা চুপ থাক।  রাসূল (সাঃ) এর বাণী ইমামের কিরআতই মুক্তাদির কেরাত। (মুসলিম) সুতরাং মুক্তাদীগণ সূরা ফাতেহা পাঠ করবে না। এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন। হাদীসের কোথাও একথা নেই যে, মুক্তাদীদের সূরা ফাতেহা পড়তে হবে। হাদীসে আছে সুরা ফাতেহা ছাড়া নামায হয় না। এটি একাকি নামায আদাকারী ও ইমামের জন্য খাস।

৯) সূরা ফাতিহা শেষে মুক্তাদীগণ সবাই নিঃশব্দে আমীন বলবেঃ
রাসূল (রাঃ) যখন সূরা ফাতিহা পাঠ শেষ করতেন, তখন অনুচ্চ স্বরে আমীন বলতেন। (তিরমিযী, আহমদ, হাকেম)

১০) নামাযের প্রথম দুরাকাতে সূরায়ে ফাতেহার পর অন্য সূরা মিলানো। (একাকী নামায আদায়কারী ও ইমাম)

১১) রুকূ করা প্রসঙ্গঃ
কিরাআত পাঠ শেষে রাসূল (সাঃ) আল্লাহ আকবার (اَللَّهُ اَكْبَرُ) বলে রুকূতে যেতন। (বুখারী) রুকুতে স্বীয় হাঁটুদ্বয়ের উপর হস-দ্বয় রাখতেন এবং তিনি এজন্য নির্দেশ দিতেন। (বুখারী) তিনি কনুই দুটোকে পাঁজর দেশ থেকে দূরে রাখতেন। তিনি রুকু অবস্থায় পিঠকে সমান করে প্রসারিত করতেন। এমন সমান করতেন যে, তাতে পানি ঢেলে দিলেও তা যেন সির থাকে। (বুখারী, তিরমিজী, তাবরানী) তিনি নামাযে ত্রুটিকারীকে বলেছিলেন, অতঃপর যখন রুকূ করবে, তখন স্বীয় হস্তদ্বয় হাটুদ্বয়ের উপর রাখবে এবং পিঠকে প্রসারিত করে স্থিরভাবে রুকূ করবে। (আহমাদ) তিনি পিঠ অপেক্ষা মাথা উঁচু বা নীচু রাখতেন না। বরং তা মাঝামাঝি থাকত। (বুখারী, আবু দাউদ)
রুকুর দুআঃ রুকুতে রাসূল (সাঃ) এই দূআ পাঠ করতেন سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ)) উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বীয়াল আযীম। অর্থঃ আমি মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি। এই দূআটি তিনি তিনবার বলতেন। কখনও তিনবারের বেশীও পাঠ করতেন। (আহমাদ)

১২) রুকূ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোঃ
অতঃপর রাসূল (সাঃ) রুকূ হতে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। তিনি এই দূআ বলতে বলতে রুকূ হতে মাথা উঠাতেন, ( سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ) উচ্চারণঃ সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে, আল্লাহ তার কথা শ্রবন করেন। (বুখারী-মুসলিম) তিনি যখন রুকূ হতে মাথা উঠাতেন, তখন এমনভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যে, মেরুদন্ডের হাড়গুলো স্ব-স্ব স্থানে ফিরে যেত। অতঃপর তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় বলতেন, رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ)) উচ্চারণঃ রাব্বানা লাকাল হাম্‌দ। হে আমার প্রতিপালক! সকল প্রশংসা তোমার জন্য।

১৩) নামাযে রফউল ইয়াদাইন না করাঃ
রাফউল ইয়াদাইন অর্থ উভয় হাত উঠানো। নবী (সা.) এর নামাযে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্য কোথাও রফউল ইয়াদাইন নেই। (মর্মার্থ) (তিরমিযী, নাসায়ী)

১৪) সাজদাহ প্রসঙ্গঃ
অতঃপর রাসূল (সাঃ) আল্লাহ আকবার বলে সাজদায় যেতেন। তিনি বলেছেন, কারও নামায ততক্ষন পর্যন্ত পূর্ণ হবেনা, যতক্ষন না সে সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদাহ বলে সোজা হয়ে দাঁড়াবে অথঃপর আল্লাহ আকবার বলবে, অতঃপর এমনভাবে সাজদাহ করবে যে, তার শরীরের জোড়াগুলো সুসিরভাবে অবস্থান নেয়। সাজদাহ অবস্থায় পার্শ্বদ্বয় থেকে হসদ্বয় দূরে রাখতেন। (বুখারী, আবু দাউদ)
নবী (সাঃ) রুকূ-সাজদাহ পূর্ণাঙ্গরূপে ধীরসিরভাবে আদায় করার নির্দেশ দিতেন।
সাজদার দূআঃ সাজদাহ অবস্থায় তিনি এই দূআ পাঠ করতেন, (سُبْحَانَ رَبِّيَ الاَعْلَى) উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বীয়াল আলা। অর্থঃ আমি আমার সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তিনি এই দূআটি তিনবার পাঠ করতেন। অতঃপর নবী (সাঃ) আল্লাহ আকবার বলে সাজদাহ থেকে মাথা উঠাতেন। তিনি বলেছেন, কোন ব্যক্তির নামায ততক্ষন পর্যন্ত পূর্ণ হবেনা, যতক্ষন না এমনভাবে সাজদাহ করবে যে, তার দেহের প্রত্যেকটি জোড়া সুস্থিরভাবে অবস্থান নেয়।

দুই সাজদার মাঝখানে বসাঃ
প্রথম সাজদাহ ও সাজদার তাসবীহ পাঠ করার পর আল্লাহ আকবার বলে স্বীয় মস্তক উত্তলন করতেন। দুই সাজদার মাঝখানে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা ওয়াজিব। নবী (সাঃ) দুই সাজদার মধ্যবতী অবস্থায় এমনভাবে স্থিরতা অবলম্ভন করতেন, যার ফলে প্রত্যেক হাড় স্ব স্ব স্থানে ফিরে যেত। (আবু দাউদ)

দুই সাজদার মাঝখানে দূআঃ
দুই সাজদার মধ্যখানে নবী (সাঃ) এই দূআ পাঠ করতেন,(اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ وَ ارْحَمْنِى وَ اهْدِنِىْ وَ عَافِنِىْ وارْزُقْنِىْ) উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলী, ওয়ার হামনী, ওয়াহ্‌দিনী, ওয়া আফিনী ওয়ারযুকনী অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, দয়া কর, হিদায়াত দান কর, মর্যাদা বৃদ্ধি কর এবং জীবিকা দান কর। এই দূআ পাঠ করে নবী (সাঃ) আল্লাহ আকবার বলে দ্বিতীয় সাজদায় যেতেন এবং প্রথম সাজদার মতই দ্বিতীয় সাজদায় তাসবীহ পাঠ করতেন। অতঃপর আল্লাহ আকবার বলে সাজদাহ থেকে মাথা উঠাতেন (বুখারী) এবং দ্বিতীয় রাকাআতের জন্য সোজা দাড়িয়ে যেতেন। (আবু দাউদ)

১৫) প্রথম তাশা্‌হহুদঃ
নবী (সাঃ) চার রাকাআত বা তিন রাকাআত বিশিষ্ট নামাযের প্রথম দুই রাকাআত শেষে তাশাহ্‌হুদ পাঠের জন্য ডান পা সোজ করে বাম পায়ের উপর বসতেন।(বুখারী) আরেক হাদীসে আছে নামাযের সুন্নাত হলো ডান পা সোজ করে বাম পায়ের উপর বসা।(বুখারী)  তাশাহহুদ التحيات لله و الصلوات والطيبات السلام عليڪ ايها النبي ورحمة الله وبرڪاته السلام علينا وعلي عباد الله الصلحين اشهد الا اله الا الله واشهد ان محمدا عبده ورسوله
 উচ্চারণঃ আত্‌তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস্‌ ছালাওয়াতু ওয়াত্বায়্যিবাতু আস্‌সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্‌ নাবিউ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু আস্‌সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্‌ সালিহীন আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রসূলুহু।
অর্থঃ মৌখিকভাবে পেশকৃত যাবতীয় সম্মান ও অভিবাদন, শরীরিক ও আর্থিক সকল ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদিত । হে নবী! আপনার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি রহমত ও বর্কত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দার প্রতি বর্ষিত হোক । আমি সাক্ষ দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই এবং এও সাক্ষ দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সা. আল্লাহর বান্দা ও রাসূল ।
এভাবে তাশাহ্‌হুদ পাঠ করার পর আল্লাহ আকবার বলে চার বা তিন রাকাআত বিশিষ্ট নামাযের বাকী নামাযের জন্য দাঁড়াবে। বাকী নামায পূর্বের নিয়মে সমাপ্ত করবে।
১৬) শেষ বৈঠক ও সালাম ফেরানোঃ
নামাজ যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়, তাহলে তাশাহ্হুদের পরে দরুদে ইব্রাহীম পড়বে।
اللهم صل علي محمد و علي ال محمد ڪما صليت علي ابراهيم و علي ال ابراهيم انڪ حميد مجيج اللهم بارڪ محمد و علي ال محمد ڪما بارڪت علي ابراهيم ر علي ال ابراهيم انڪ حميد مجيد

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ অ আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারকতা আলা ইব্রাহীমা অ আলা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
তারপর দোয়ায়ে মাছুরা পড়বে।
اللهم اني ظلمت نفسي ظلما ڪثيرا و لا يغفر الذنوب الا انت فاغفرلي مغفرة من عندڪ انڪ انت الغفور الرحيم

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফছি জুলমান কাসিরান অলা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলী মাগফিরতাম মিন ইন্দিকা ইন্নাকা আন্তাল গফুরুররহীম।

অর্থঃ  হে আল্লাহ আমি আমার নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি। তুমি ব্যতীত কেউ ক্ষমাশীল নেই অতএব তোমার পক্ষ থেকে আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিশ্চই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

তাপর  السلام عليڪم ورحمة الله     ( আস্সালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ) বলে সালাম ফিরাবে । প্রথমে ডান পাশে তারপর বাম পাশে। সালাম ফিরানোর সময় দৃষ্টি থাকবে কাঁেধর দিকে ডান পাশে সালাম ফিরানোর সময় ডন কাঁধের দিকে আর বাম পাশে ফিরানোর বাম কাঁধের দিকে। ডান পাশে সালাম ফিরানোর সময় সালামের দ্বারা নিয়্যত থাকবে ডান পাশের ফেরেশÍাদের আর বাম পাশে সালাম ফিরানোর সময় নিয়্যত থাকবে বামপাশের ফেরেশÍাদের ।

আর যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয়, তাহলে দুই রাকাতের পর যে বৈঠক হবে তাহবে প্রথম বৈঠক। এই প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহ্হুদ পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাড়িয়ে যাবে আর তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়বে কিন্তু কোন সূরা মিলাবে না। তৃতীয় রাকাত শেষ করে তাশাহ্হুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পরে সালাম ফিরাবে।

নামাজ যদি চার রাকাত বিশিষ্ট হয়, তাহলে প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহ্হুদ পড়বে তারপর আরো দুই রাকাত পড়বে।আর এই দুই রাকাতে শুধু সূরা ফাতেহা পড়বে, কোন সূরা মিলাবে না। চতুর্থ রাকাতের পরে শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়ে সালাম ফিরাবে। 

ওয়াজিব নামাজ
বিতর ও দুই ঈদের নামাজ হলো ওয়াজিব।

বিতরের নামাজ তিন রাকাত। বিতরের নামাজের ওয়াক্ত হলো, এশার নামজ আদায় করার পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত । এ ওয়াক্তের মধ্যে যে কোন সময় বিতরের নামাজ আদায় করতে হবে। যদি শেষ রাতে জাগার অভ্যাস থাকে তাহলে শেষ রাতে বিতরের নামাজ আদায় করা উত্তম । আর জাগ্রত হওয়ার অভ্যাস না থাকলে ঘুমানোর আগেই বিতরের নামাজ আদায় করে নিবে ।

বিতরের নামাজ যেভাবে পড়তে হয়
 বিতরের নামাজের তিনো রাকাতে সূরা ফাতেহার পরে সূরা মিলানো ফরজ। আর তৃতীয় রাকাতে ক্বেরাতের পর الله اڪبر   বলে কান বরাবর হাত উঠিয়ে আবার নাভীর নিচে হাত বেধে দোয়ায়ে কুনুত পড়বে।
اللهم انا نستعينڪ و نستغفڪ ونؤمن بڪ و نتوڪل عليڪ ونثني عليڪ الخير و نشڪرڪ ولا نڪفرڪ و نخلع ونترڪ من يفجرڪ اللهم اياڪ نعبد ولڪ نصلي و نسجد واليڪ نسعي و نحفد ونرجو رحمتڪ و نخشي عذابڪ ان عذابڪ بالڪفار ملحق

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাইনুকা ,অনাসতাগফিরুকা,অনু-মিনুবিকা, অনাতাঅক্কালু আলাইকা, অনুসনী আলাইকাল খইরা , অনাশকুরুকা , অলানাকফুরুকা, অনাখলা ণাতরুকু, মাই ইয়াফ জুরুকা, আল্লাহুম্মা ইয়্যাকানাবুদু , অলাকানুছল্লি, অনাসজুদু, অইলাইকা নাসআ, অনাহফিদু, অনারজু রহমাতাকা, অনাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিলকুফ্ফারি মুলহিক।

অর্থঃ  হে আল্লাহ আমরা আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি । আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করছি । আপনার কাছে ক্ষমার আবেদন করছি । আপনার কাছে তওবা করছি । আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছি । আপনার উপর ভরসা করছি । আপনার সকল কল্যাণের প্রশংসা করছি । আমরা আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । আমরা আপনার অনুগ্রহ অস্বীকার করি না । আমরা পৃথক চলি । এবং পরিত্যাগ করি এমন লোকদের, যারা আপনার বিরুদ্ধাচারণ করে । হে আল্লাহ ! আমরা আপনারই ইবাদত করি । এবং আপনারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমরা নামাজ পড়ি ও সিজদা করি । আপনার প্রতিই আমরা ধাবিত হই এবং আমরা আপনার আযাবকে ভয় করি । নিশ্চাই আপনার প্রকৃত আযাব কাফেরদের উপর পতিত হবে । আল্লাহ তাআলা নবী সা.-এর প্রতি ও তার পরিবার পরিকনের প্রতি রহমত বর্ষকরুন এবং তাকে শান্তিতে রাখুন ।

তারপর বিতরের নামাজের বাকী নিয়ম অন্যান্য নামাজের মতই।

দুই ঈদের নামাজ 
অন্যান্য নামাজের সাথে ঈদের নামাজের পার্থক্য হলো , দুই রাকাতে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর বলতে হয়। প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবে। প্রত্যেক তাকবীর বলার সময় দুই হাত কান বরাবর উঠিয়ে নাভীর নিচে না বেধে নিচের দিকে ছেড়ে দিবে। তিনটি তাকবীর বলা শেষ হলে নাবীর নিচে হাত বাধবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে ক্বেরাতের পর অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবে একই নিয়মে তারপর চতুর্থ তাকবীর বলে রুকুতে যাবে। বাকী সব নিয়ম অন্য নামাজের মতই।

সুন্নত নামাজ
·        ফজরের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
·        জোহরের ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজআদায় করা সুন্নত।
·        জুমার ফরযের আগে চার রাকাত ও ফরযের পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
·        মাগরিবের ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
·        এশার ফরযের পরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।
এসকল সুন্নত নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলা হয়। কোন ধরনের ওযর ছাড়া এসুন্নতগুলো তরক কারী গুনাহগার হবে।

সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম
সুন্নত নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা মিলাতে হবে আর বাকী সকল নিয়ম অন্যান্য নামাজের মতই। সুন্নত নামাজ যদি সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা ও নফল হয় এবং চার রাকাত বিশিষ্ট হয় , তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহ্হুদের পরে দুরুদ শরীফ ও দুআয়ে মাছুরা পড়াও উত্তম ।

জামা আতের সাথে নামাজ আদায় করলে মুক্তাদিগনের করণীয়
ইমামের পিছনে যারা ইক্তেদা করে তাদেরকে মুক্তাদি বলে । ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করার নিয়্যত করতে হবে তা ছাড়া নামাজ আদায় হবে না । মুক্তাদিগন ইমামের তাকবীরে তাহরীমা বলার পর তাকবীর বলে কান বরাবর হাত উঠাবে । তারপর নাভীর নিচে হাত বাঁধবে । তারপর ছানা পড়ে চুপ করে ইমাম ক্বেরাত  একাগ্র চিত্তে শুনতে থাকবে আর যদি ইমাম আস্তে ক্বেরাত পড়ে তাহলে আল্লাহ পাকের প্রতি মনোনিবেশ করে দাড়িয়ে থাকবে । ইমাম যখন রুকু সেজদার জন্য তাকবীর বলবে মুক্তাদিগনও অনুচ্চ আওয়াজে তাকবীর বলে  ইমামসাহেবকে অনুরণ করবে । ইমাম সাহেব যখন সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ বলে রুকু থেকে উঠবে মুক্তাগণ তখন রাব্বানা লাকালহামদু বলে ইমামের পরে রুকু থেকে সুজা হয়ে দাড়াবে

প্রত্যেক রুকু সেজদায় মুক্তাদিগণও রুকু সেজদার তাসবীহ পড়বে । এবং প্রথম বৈঠকে  তাশাহ্হুদ পড়বে এবং দ্বিতীয় বৈঠকে তাশাহ্হুদ দুরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়বে । তারপর ইমামের সালামের সাথে সালাম ফিরাবে। ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় নিয়্যত করবে ডান পাশের মুসুল্লি ও ফেরেশÍাদের ও ইমাম ডানে থাকলে ইমামের  আর বাম দিকে সালাম ফিরানোর সময় নিয়্যত করবে বাম পাশের মুসুল্লি ফেরেশÍার এবং বামে ইমাম থাকলে ইমামের।

মহিলাদের নামাজ
মহিলাদের নামাজের নিয়ম প্রায় পুরুষের নামাজের মতই। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যাবধান আছে তা হলো, দাড়ানো অবস্থায় দুই পা মিলিয়ে রাখবে । তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় মহিলারা কাধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। তারপর বুকের উপর হাত বাধবে বাম হাতের পিঠের উপর ডান হাতের তালু রাখবে । রুকুতে পুরুষের মত উভয় হাতে হাটুতে ভাল করে ধরবে না বরং দুই হাতের আংগুল মিলিত রেখে হাটুকে স্পর্স করবে এবং দুই পায়ের টাখনু মিলিয়ে রাখবে । পুরুষের রুকুর মত মাথা পিঠ ও মাজা সমান হবে না । সেজদার মাঝে মহিলারা দুই পা বাম দিক দিয়ে বের করে ডান নিতম্বের উপর বসবে তারপর হাত জমীনে বিছিয়ে সেজদা করবে। পেট রানের সাথে মিলিয়ে বাহু পাজরের সাথে মিলিয়ে এবং হাতের কনুই জমীনের সাথে মিলিয়ে যথা সম্ভব জমীনের সাথে চেপে ধরে সেজদা করবে । বসার সময় দুই পা বাম দিকে বের করে দিয়ে ডান নিতম্বের উপর বসবে। মহিলাদের নামাযের বাকী নিয়ম পুরুষের নামাযের মতই।

রাসূল সা. বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যারা সুন্দরভাবে আদায় করে আল্লাহ তাআলা তাকে পাঁচটি  বিশেষ পুরুস্কার দান করে সম্মানিত করবেন। (১) তার থেকে মৃত্যুও কষ্ট দূর করে দিবেন। (২) কবরের শাস্তি থেকে তাকে মাফ করে দিবেন। (৩) কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে ডান হাতে আমালনামা দান করবেন। (৪) বিদ্যুাতের গতিতে ফুলসীরাত পার করবেন। (৫) বিনা হিসাবে জান্নাত দান করবেন   অতএব সহীহ তরিকায় নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তা শিখে নেওযা জরুরী । রাসূল সা. কে আল্লাহ তাআলা জিব্রাইল আ. এর মাধ্যমে সহীহ তরিকার নামাজ পড়া শিখিয়েছেন।  আর  রাসূল সা. নিজেও হযরত জিব্রাইল আ. এর  দেখানো তরিকায়ই সব সময় নামাজ পড়তেন । কারণ এটিই ছিল আল্লাহ তাআলার শিখানো তরিকা। হযরত সাহাবায়ে কেরাম রা. রাসূল সা. কে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখেছেন ঠিক সেভাবেই তারা নামাজ আদায়  করেছেন। কারণ এটাই নামাজের বিশুদ্ধ তরিকা।
হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধভাবে নামায আদায়ের তাউফিক দিন। আমীন

No comments:

Post a Comment