Thursday, December 10, 2015

আপনার পুরাতন ল্যাপটপকে দিন নতুন জীবন

সাধারনত যে সব ল্যাপটপের বয়স ৩ বছরের বেশি তাদেরকে আমরা পুরাতন ল্যাপটপ বলে থাকি। কারন প্রত্যেক বছরে নতুন নতুন সব মডেল, নতুন স্টাইল এবং নতুন এক চেহারার ল্যাপটপ বের হচ্ছে। আর নতুনকে ঘিরে থাকা মানুষদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা ল্যাপটপগুলো একটু বেশিই স্লো মনে হয়। কারন বর্তমান অপারেটিং সিস্টেমগুলো সব সময় ভালো ভালো হার্ডওয়্যার কনফিগারেশনের জন্য ক্ষুধার্থ থাকে। ফলে নতুন ল্যাপটপগুলোর হার্ডওয়্যার কনফিগারেশনের সাথে পুরাতন ল্যাপটপগুলোর হার্ডওয়্যার কনফিগারেশনের তফাত অনেকটা লক্ষণীয়। যাহোক, আসলে তুলনামুলক হার্ডওয়্যার কনফিগারেশনের তাইতেও পুরাতন পিসিগুলো বেশি স্লো হয়ে যায়। ফলে অহেতুক বিরক্তি বাড়ে এবং কাজ করতে লাগে প্রচুর সময়। আজকের টিউনে আমরা পুরাতন সেই ল্যাপটপগুলোকে নতুন ল্যাপটপগুলোর কাছাকাছি স্পিডের এবং কাছাকাছি কার্যক্ষমতার করার এক্সক্লুসিভ সব টিপস নিয়ে আলোচনা করবো। তবে দুঃখের কথা হলো, কেন জানি টিউজিটরগণ আমার টিউনগুলোতে শুধু সফটওয়্যার খুঁজে। হার্ডওয়্যার নিয়ে কিছু লিখলে তাদের মন ভরে না। আজকেও তাদের দুঃখকে আরও একটু বাড়িয়ে দিতে সেই হার্ডওয়্যার বিষয়েই লিখছি। কারন মুখের কথায় নয় কাজের ভিত্তিকে কিছু প্রমাণ করতে গেলে হার্ডওয়্যার আপগ্রেডের কোন বিকল্প নেই। চলুন তাহলে জেনে নেই পুরাতন ল্যাপটপগুলোকে নতুনত্ত্বের ছোঁয়া দিতে আমাদের কী কী কাজ করতে হবে।

সম্পূর্ণ ল্যাপটপ খুলে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন

প্রত্যেকটি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো ধুলো ময়লা। কেন জানিনা, এই ইলেকট্রনিক্স পণ্যের উপরেই যেন ধুলো ময়লার আক্রমন সবচেয়ে বেশি হয়। কিছুক্ষণ বায়রে রেখে দিলেই দেখা যায় তাদের উপর ধুলোর একটা আস্তরণ পড়ে গেছে। যাহোক, ল্যাপটপে ময়লা জমার কারনে ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় এবং হার্ডওয়্যার পারফরমেন্স কমে যায়। ফলে অটোমেটিক ল্যাপটপ স্লো হতে শুরু করে। একারনে ল্যাপটপ সব সময় পরিষ্কার রাখাটা জরুরী। এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক ল্যাপটপকে পরিষ্কার করতে হলে কী কী করতে হবে। যদিও এটা কঠিন কোন কাজ নয় তবে যারা নতুন এবং কোনদিন ল্যাপটপ খুলেননি তাদের জন্য হাতে ধরে বিস্তারিত বর্ণণা করছি।

প্রয়োজনীয় উপকরণঃ

  • একটা স্ক্রু-ড্রাইভার, একটা সুতি কাপড়ের পরিষ্কার ন্যাকড়া, একটি পেইন্ট ব্রাস, মাল্টিমিডিয়া ফোন এবং কাগজ- কলম।

যেভাবে কাজ করবেনঃ

  • আপনি যেহেতু প্রথমবার কাজ করছেন তাই কাজে ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। কারন কম্পিউটার খুলতে গেলে এর সাথে সম্পৃক্ত অনেক যন্ত্রপাতি খুলতে হবে। কোনটা কোথায় থেকে খুলছেন এটা যদি মনে না থাকে তাহলে সেগুলো পুনরায় লাগানোর সময় ঝামেলা পাকিয়ে ফেলতে পারেন। তাই প্রথমে মোবাইল থেকে আপনার কাজের প্রত্যেকটি স্টেপ ভিডিও করে রাখতে পারেন।
  • কোন স্ক্রু কোথায় থেকে খুললেন এবং সে সংক্রান্ত কিছু কাগজে লিখে রাখতে পারেন। এটা আপনার ভুলে যাওয়া রোধ করবে।
  • সাবধানে প্রত্যেকটা পার্টস খুলে আলাদা করে রাখুন। এবং ব্রাশ কিংবা ন্যাকড়া দিয়ে সেগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। তবে মনের ভুলেও কোন যন্ত্রাংশে পানির ছোঁয়া লাগাবেন না।
  • ল্যাপটপের ফ্যান এর প্রতি একটি বেশি নজর দিন। কারন ওখানেই ময়লা বেশি লেগে থাকে। ফ্যান ভালোভাবে পরিষ্কার করুন এবং প্রয়োজনে একটু কুলিং পেস্ট ব্যবহার করুন।
  • এবার যেভাবে খুলেছেন সেভাবে লাগিয়ে ফেলুন। ব্যাস আপনার কাজ শেষ। এরপর কোনদিন একই কাজ করতে গেলে আশা করি সব মনে রেখেই করতে পারবেন। কয়েক মাস পরপর একই প্রসেস অনুসারে ল্যাপটপ পরিষ্কার রাখুন।

অপারেটিং সিস্টেম রি-ইনস্টল করুন অথবা পরিবর্তন করুন

দীর্ঘদিন একই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করলে সেটাও এক সময় নড়বড়ে হয়ে যায়। কোন প্রোগ্রাম আনইনস্টল করার পরেও দেখা যায় তার ভাঙ্গা রেজিস্ট্রি ফাইলগুলো থেকে যায়। তাছাড়া ম্যালওয়্যার এটাক থেকে থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারনে অপারেটিং সিস্টেম আনস্টেবল হয়ে যায়। ফলে পিসি স্লো হওয়ার পাশাপাশি নানা রকম অপারেটিং সিস্টেম ঘটিত সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে অপারেটিং সিস্টেম রিইনস্টল করা কিংবা আপগ্রেড করা যেতে পারে। তবে ল্যাপটপ যদি খুব বেশি পুরাতন হয় তাহলে অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেড না করে লোয়ার গ্রেডও করতে পারেন। যেমন উইন্ডো সেভেন থাকলে উইন্ডোজ এক্সপিতে ব্যাক করতে পারেন।
অপারেটিং সিস্টেম রিইনস্টল কিংবা পরিবর্তন করার পর দেখেশুনে সফটওয়্যার ইনস্টল করবেন। মাঝে মাঝে যেসব সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে সেগুলো ব্যবহার শেষেই আনইনস্টল করে ফেলবেন। প্রথম দুইটা পদ্ধতি কোন প্রকার টাকা খরচ না করেই প্রত্যেকেই করতে পারবেন। আশা করি এই দুইটা পদ্ধতিই যথেষ্ট হবে আপনার বৃদ্ধ ল্যাপটপকে নতুন যৌবণ দান করতে। পরের পদ্ধতিগুলো ল্যাপটপের গতি এবং পারফরমেন্স দুটোই স্ট্যাবল ভাবে বৃদ্ধি করবে। কিন্তু এর জন্য পকেট থেকে কিছু টাকা খরচ করতে হবে।

ল্যাপটপের র‍্যাম এর পরিমাণ দ্বিগুণ করে দিন

ল্যাপটপের র‍্যাম (RAM – Random Access Memory) হলো চলমান ল্যাপটপ মেমোরির হাই পারফোরমেন্স ফর্ম। ল্যাপটপে যখন কোন প্রোগ্রাম রান হয় তখন সেটা অস্থায়ীভাবে র‍্যামে জমা হয়। আপনি যতো বেশি প্রোগ্রাম চালাবেন ল্যাপটপ র‍্যামে ততো বেশি ফাইল জমা হবে এবং খালি জায়গার পরিমান কমে আসবে। এখন যদি অনেকগুলো প্রোগ্রাম একসাথে রান করেন এবং সে অনুযায়ী র‍্যামে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে তাহলে ল্যাপটপ স্লো কাজ করবে। এ কারনে ল্যাপটপে প্রোগ্রামগুলো অবাধে রান করার জন্য পর্যাপ্ত র‍্যাম থাকা জরুরী। আমি পরমর্শ দিবো যে পরিমাণ র‍্যাম আছে তার দ্বিগুণ করার জন্য। অর্থাৎ আগে থেকে ২ জিবি থাকলে সেই সাথে আরও ২ জিবি নতুন ইনস্টল করবেন।
ল্যাপটপে র‍্যাম সংযুক্ত করা খুবই সহজ কাজ। কিছু ল্যাপটপের কিবোর্ডের নিচে আবার কিছু কিছু ল্যাপটপের ব্যাক কাভারের নিচে র‍্যাম এর জন্য আলাদা দুটি স্লট থাকে। সাধারন ক্লিপ দিয়ে র‍্যামগুলো আটকানো থাকে। সুতরাং শুধুমাত্র কিবোর্ড অথবা ব্যাক কাভার খুলে ফেলুন আর র‍্যামগুলো ক্লিপ এর সাথে আটকে দিন। আপনার কাজ শেষ। তবে ল্যাপটপ র‍্যাম এর দাম প্রসঙ্গে কিছু বলি। বর্তমান বাজারে ১ হাজার টাকায় ১ জিবি র‍্যাম, ২ হাজার টাকায় ২ জিবি র‍্যাম এবং ৩-৪ হাজার টাকায় ৪ জিবি র‍্যাম পাওয়া যায়। র‍্যাম এর কোয়ালিটি ভেদে দামের কিছুটা পরিবর্তন হলেও মোটামুটি এই দামের ভেতর র‍্যাম কিনতে পারবেন। তারপর সংযোজন তো নিজেই করতে পারবেন।

নতুন ওয়্যারল্যাস এডাপ্টার সংযুক্ত করুন

ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্রাউজিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ল্যাপটপের বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিন্তু ইন্টারনেট ব্রাউজিং স্পিডও কমে আসে। আসলে যা হয়, নেটওয়ার্ক এডাপ্টারগুলো সিগনাল ধরার শক্তি হারিয়ে ফেলে। সুতরাং ল্যাপটপকে পূর্ণ উদ্দোমে ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই একটি নতুন ওয়্যারল্যাস এডাপ্টার সংযুক্ত করতে হবে। বাজারে এক হাজার টাকার মধ্যেই ওয়্যারল্যাস এডাপ্টার কিনতে পাবেন। এবং র‍্যাম এর মতোই এটাকেও একই পদ্ধতিতে ল্যাপটপে নিজে নিজে লাগাতে পারবেন। তবে এসব যদি ঝামেলার মনে হয় তাহলে একটি টিপি লিংক ওয়্যারল্যাস রিসিভার পোর্টেবল হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। আর দাম এক হাজার টাকার বেশি হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

HDD কে SSD দ্বারা রিপ্লেস করুন

হার্ড ড্রাইভ স্পিড ল্যাপটপের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অধিকাংশ ল্যাপটপে 5400 RPM ড্রাইভ থাকে। যেটা স্লো স্পিড এবং লো ডাটা ট্রান্সফার রেটের হয়ে থাকে। অনেক সময় ভালো মানের ল্যাপটপগুলোতেও খুব সস্তা ধরনের হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করা হয়। ফলে আপনি যখন কোন ফাইল বা প্রোগ্রাম রান করেন তখন ল্যাপটপ হ্যাং হয়ে যায়। আমার নিজের ল্যাপটপ ২০১০ সালে ম্যানুফেকচার করা। আমি নিজেও এরকম সমস্যায় পড়ি মাঝে মাঝে। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে SSD ব্যবহার করা যেতে পারে। SSD সাধারন হার্ড ড্রাইভের তুলনায় প্রায় ৩গুন দ্রুতগতির। সুতরাং ল্যাপটপে SSD থাকলে যেকোন নতুন ল্যাপটপকে আপনার পুরাতন ল্যাপটপ অনায়াসে টেক্কা দিতে পারবে।
ল্যাপটপে SSD ইনস্টল করা বেশি একটা ঝামেলার মনে হবে না। শুধু আগেরটা খুলে নতুনটা সংযোজন করুন। তবে SSD এর দাম খুব বেশি না হলেও একেবারে সবার সাধ্যের মধ্যে নাও থাকতে পারে। আপনি ৬ হাজার টাকা খরচ করে ১২৮ জিবি একটি SSD কিনতে পারবেন। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, ল্যাপটপ খুব বেশি পুরাতন হলে SSD না লাগানোটাই ভালো। প্রথম ২ টা পদ্ধতি যেকোন বয়সের ল্যাপটপের জন্য প্রযোজ্য হলেও তার পরের ২টা পদ্ধতি ৫-৬ বছরের বেশি পুরাতন কোন ল্যাপটপে এবং শেষ পদ্ধতি ৩-৪ বছরের বেশি পুরাতন ল্যাপটপে প্রয়োগ না করাটাই ভালো

No comments:

Post a Comment