এখন শীতকাল। শীতের রুক্ষতা থেকে
শরীরের তথা মুখের এই ছোট অংশ ঠোঁটও বাদ পড়ে না। শীতে ঠোঁট ফাটা একটি কমন সমস্যায়
পরিণত হয়। আসুন জেনে নিই কীভাবে ঠোঁট ফাটা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
যা করবেন না আর যা করবেন
- ঠোঁটের সুরক্ষায় কী কী করবেন তা জানার আগে জেনে নিন কী কী করা যাবে না।অনেকেই ঠোঁট ভেজানোর জন্য জিভ ব্যবহার করে থাকেন। এটা নিতান্ত বদ অভ্যাস। কারণ ঠোঁট এতে নরম তো হয় না বরং ঠোঁট ফাটার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর বদলে সঙ্গে একটা লিপ-বাম বা লিপ-জেল রাখুন এবং ঠোঁট শুকনো লাগলেই একটু মেখে নিন। আর হাত-মুখ ধোয়ার সময় বা দাঁত মাজার সময় কোনোভাবেই যাতে ঠোঁটে জোরে জোরে ঘষা-মাজা না লাগে তা খেয়াল রাখা দরকার। এ সময় নরম ঠোঁটে আঁচড় পড়লে তা ভোগাতে পারে।
- যাদের ঠোঁটের রঙ কালো বা দাগ আছে তারা সমপরিমাণ গ্লিসারিন ও লেবুর রস মিশিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারেন। ভালো কাজ দেবে।
- অনেকের ঠোঁট বেশি শুষ্ক। তাদের ঠোঁটই বেশি ফেটে থাকে। তাদের উচিত সঙ্গে সবসময় পেট্রলিয়াম জেলি রাখা। যখনই ঠোঁট শুষ্ক লাগবে তখনই পেট্রলিয়াম জেলি বা লিপবাম লাগাবেন।
প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি
পান করতে হবে।
- এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। অনেক সময় ডিহাইড্রেশনের ফলে ‘ডার্ক লিপ্স’য়ের সমস্যা হতে পারে | তাই শরীর আর্দ্র রাখতে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
- খুব ঠাণ্ডা হাওয়া থেকে মুখের ত্বক বাঁচাতে স্কার্ফ পরা যেতে পারে।
নরম
গোলাপি ঠোঁট
ঠোঁট সুন্দর করতে
ঘোরোয়া কিছু সহজ উপায় মেনে চললেই হয়।
- শিবানী দে বলেন, “প্রথমেই ঠোঁট পরিষ্কার করার সহজ একটি উপায় জানা যাক। কাঁচা দুধ আর মধু একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর একটি সাদা পরিষ্কার কাপড় বা তুলা ওই মিশ্রণে ভিজিয়ে ঠোঁটে ঘষে নিতে হবে। এতে ঠোঁট পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি মসৃণ ও সুন্দর হবে।”
এরপর ঠোঁট স্ক্রাবি’য়ের পদ্ধতি সম্পর্কে জানান তিনি।
- এক চা-চামচ অলিভ অয়েলের সঙ্গে এক চা-চামচ চিনি মিশিয়ে ঠোঁটের জন্য ঘরোয়া স্ক্রাব তৈরি করা যায়। এই মিশ্রণ ঠোঁটে লাগিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট ধরে আলতো করে ঘষে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর ঠোঁটে লিপ বাম লাগিয়ে নিতে হবে। এই ঘরোয়া স্ক্রাব ঠোঁটের মরা কোষ পরিষ্কার করে ঠোঁটকে নরম ও গোলাপি করতে সাহায্য করবে।
ঠোঁট নরম করার উপায়
- পাকা পেঁপে চটকে তার সঙ্গে দুধের মাঠা মিশিয়ে একটা মিশ্রণ করতে হবে। সেটা ঠোঁটে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্রলেপ ঠোঁটের পুষ্টিও জোগাবে।
- সমান পরিমাণে লেবুর রস আর মধু মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে| এরপর ভালো করে মিশ্রণটি ঠোঁটে লাগিয়ে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে নরম কোনও ভেজা কাপড় দিয়ে আলতো করে ঘষে তুলে ফেলতে হবে| এটি চাইলে প্রতিদিনে এবং দিনে একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে।
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গ্লিসারিন ব্যবহার
- সান ট্যান ছাড়াও ঠোঁট বেশি শুষ্ক হয়ে গেলে ঠোঁট কালো হয়ে যেতে পারে| রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালো করে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগিয়ে নিতে হবে| এর ফলে ঠোঁটে আর্দ্রতার পরিমাণ ঠিক থাকবে আর নিয়মিত ব্যবহারে ঠোঁটের রং-ও স্বাভাবিক হয়ে আসবে| ঠোঁটের কালো দাগ দূর করতেও এই পদ্ধতি বেশ উপকারী|
- ঠোঁটে এক টুকরা বিট নিয়ে হাল্কা করে ঠোঁটে মালিশ করতে হবে| বিটের রস ট্যান বা পোড়াভাব দূর করতে সাহায্য করে আর কিছুদিনের মধ্যেই ঠোঁটের রং স্বাভাবিক গোলাপি হয়ে উঠবে|
শসার রস কালো দাগ উঠাতে দারুণ কার্যকর।
- রোজ নিয়ম করে ঠোঁটে শসার রস লাগালে কিছুদিনের মধ্যেই ঠোঁটের কালচেভাব অনেকটাই কমে আসবে।
- ঠোঁটের ত্বক অত্যন্ত নমনীয়। তাই বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। ঠোঁটে লিপ বাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে এপিএফ যুক্ত লিপ বাম ব্যবহার করতে হবে।
শিবানী দে বলেন, “সস্তা বা কম দামি লিপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিত নয়।
এতে ঠোঁট কালো হয়ে যেতে পারে এবং আরও অনেক ধরনে ক্ষতি হতে পারে। ঠোঁটের জন্য
হার্বাল লিপ বাম ব্যবহার করা সব থেকে ভালো।”
গোলাপ-মধুর
লিপ-প্যাক
- শীতে ঠোঁটের যত্নে ঘরে বসে নিজেই নিজের জন্য তৈরি করে নিতে পারেন সাশ্রয়ী লিপ-প্যাক। কিছু গোলাপের পাপড়ি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে নিন। এবার পাপড়িগুলো ভালো করে চটকে নিয়ে সঙ্গে খানিকটা মধু মিশিয়ে একটা মণ্ড তৈরি করে ফেলুন। মণ্ড তৈরি হয়ে গেলে তা আলতো করে ওপরের ও নিচের ঠোঁটে মাখুন। ঠোঁটের ওপর মণ্ডটা শুকিয়ে যেতে ধরলে পানি দিয়ে করলে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। মধু ঠোঁটকে পুষ্টি জোগাবে এবং গোলাপ পাপড়ির রস কোমল ঠোঁট দুটোকে গোলাপি আভায় রাঙিয়ে তুলবে।
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাতের তালুতে একটু সরিষার তেলের সঙ্গে সামান্য একটু ঘি নিয়ে আঙুলে ডগায় করে আলতোভাবে ঠোঁটে মেখে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজতে আয়নার সামনে দাঁড়ালেই টের পাবেন ঠোঁটের এই যত্নের সুফল। মাঝেমধ্যে এই টোটকায় আপনার ঠোঁট বাড়তি চমক দেখাবে আপনাকে।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠোঁটকাঠির রঙের প্রলেপ তুলে ফেলেছেন। এবার বিছানায় যাওয়ার পালা। কিন্তু ঠোঁটকে একটু বাড়তি সময় দিন। একটুখানি দুধ-মালাই দিয়ে ঠোঁট দুটো আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। সামান্য কিছুক্ষণ এমন ম্যাসাজে ঠোঁটে রক্ত চলাচল বাড়বে এবং দুধ-মালাই থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিও পাবে আপনার ঠোঁট। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন আপনার ঠোঁট শীতের ঠান্ডা মোকাবিলায় প্রস্তুত।
No comments:
Post a Comment