শীতকালে ত্বক ও
চুল রুক্ষ হয়ে যায়, চেহারা হারায় তার স্বাভাবিক শ্রী, তাই ত্বক ও চুলের বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন। সঠিক ক্রিম, তেল, সাবান, শ্যাম্পুর
ব্যবহার, প্রয়োজনীয় খাদ্যগ্রহণ ও জীবনযাত্রার সামান্য
পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আমরা শীতকালেও ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতে পারব।
শীতকালে ক্রিম, সাবান যাই ব্যবহার করবেন লক্ষ রাখবেন তা যেন ময়েশ্চারাইজারযুক্ত হয়।
দিনে অন্তত দু’বার
ক্রিম ব্যবহার করবেন। আলফা হাইড্রক্সি বা ভিটামিন-ই যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করা
ভালো। গোসলের আগে শরীরে অলিভ অয়েল মাখতে পারেন অথবা গোসলের শেষে অল্প পানিতে
কিছুটা অলিভ অয়েল দিয়ে গা ধুয়ে নিন। তারপর আলত করে গা মুছবেন।
সাধারণত আমরা মনে করি, শীতকালে সানস্ক্রিন প্রয়োজন হয় না। এটি ভুল ধারণা। ত্বক বিশেষজ্ঞের
মতে, টঠঅ রশ্মি ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকারক। টঠঅ রশ্মি ত্বকে
দ্রুত বলিরেখা ফেলতে সহায়তা করে। ত্বকে উপযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে
বার্ধক্যজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। একথা ঠিক যে, সূর্যরশ্মি সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের জন্য প্রয়োজন। এতে যে ভিটামিন পাওয়া
যায় তা প্রয়োজনীয়। কিন্তু বেশি সূর্যরশ্মি ও টঠঅ রশ্মি ত্বকে অপূরণীয় ক্ষতি ও
অকালবার্ধক্যের কারণ। সানস্ক্রিন টঠঅ-এর দাহ্যতা কমিয়ে দেয়। শীতকালেও নিয়মিত
সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি।
শীতে বাতাসের
আর্দ্রতা কম থাকে বিধায় ত্বকের এপিডার্মাল লেয়ার থেকে আর্দ্র ভাব কমে যায়। এর ফলে
ত্বকে বলিরেখা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ময়শ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে
হবে। তা ছাড়া গোলাপজল ও গ্লিসারিন ৩:১ অনুপাতে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
শীতের আরেক সমস্যা হচ্ছে ঠোঁট ফাটা ও কালো হয়ে যাওয়া। এর সমাধানও গ্লিসারিন।
বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাবেন না। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে গ্লিসারিন লাগাবেন।
হাত-পায়ের ত্বক
ফেটে গেলে তারপর গ্লিসারিন বা ভেসলিন না মেখে বরং ফেটে যাওয়ার আগেই গ্লিসারিন মেখে
নেয়া ভালো।
শীতে ত্বকের
যত্নে আপনাকে অবশ্যই কিছু সময় দিতে হবে। মহিলারা যারা নিয়মিত ফেসিয়াল, স্ক্র্যাব ম্যাসাজ করান তারা শীতকালেও নিয়মিত চালিয়ে যান। শীতকালের
জন্য ফেসিয়াল ও স্ক্র্যাব ম্যাসাজ বেশ ভালো। কারণ এতে ত্বকের মরা কোষ উঠে যেতে
সাহায্য করে।
বাতাসে আর্দ্রতা
কম থাকার কারণে শীতে চুল হয়ে উঠে রুক্ষ এবং খুশকির উপদ্রব হয়। খুশকির জন্য ভালো
শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। প্রয়োজনে ত্বক বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। বাজারচলতি বা
আকর্ষক বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ হয়ে কখনো শ্যাম্পু কিনবেন না। ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
অনুযায়ী নিজোরাল শ্যাম্পু কিংবা সেলসান শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
চুল সাধারণত দু’রকম, তৈলাক্ত ও শুষ্ক, চুল তৈলাক্ত হওয়ার অর্থ যে
ত্বকের ওপর আপনার চুল অর্থাৎ স্ক্যাল্প সেই ত্বকে সেবাশিয়াস গ্রন্থির অতিরিক্ত
সেবাম নিঃসরণের ফলে চুল তৈলাক্ত হয়ে পড়ছে। আর চুল শুষ্ক হওয়ার অর্থ যে ত্বকের ওপর
আপনার চুল অর্থাৎ স্ক্যাল্প সেই ত্বকে সেবাশিয়াস গ্রন্থির ক্ষরণ খুব কম হয় যার ফলে
চুল শুষ্ক হয়ে পড়ছে।
তৈলাক্ত চুলের
ক্ষেত্রে স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখা জরুরি। একদিন অন্তর অন্তর চুলের উপযোগী
শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুলে ভালো। শুষ্ক চুলের ক্ষেত্রে হটওয়েল থেরাপি ভালো কাজ করে।
সামান্য গরম অলিভ অয়েল চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে তারপর গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে
মাথায় জড়িয়ে রাখতে হবে ১৫ মিনিট। এরপর চুলের উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল
ধুয়ে ফেলবেন।
ভেজা চুল কখনো
আঁচড়াবেন না। তোয়ালে দিয়েও খুব ঘষে চুল মুছলে চুলের ক্ষতি হয়। ভিজা চুল কখনো
বাঁধবেন না।
রাতে ঘুমাতে
যাওয়ার আগে বজ্রাসনে বসে চুল আঁচড়াবেন। এতে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং আপনি মানসিক
চাপমুক্ত হয়ে ঘুমাতেও পারবেন।
শীতকালে ত্বকের
ও চুলের যত্নে কিন্তু আপনাকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও মনোযোগী হতে হবে। শীতের
শাকসবজি ও ফল সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক ও চুলের জন্য প্রয়োজন। শিম, বরবটি, নানারকম শাক, মটরশুঁটি,
ফুলকপি, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি প্রতিদিনের
খাদ্য তালিকায় রাখুন। দেশী-বিদেশী, হাতের নাগালের সব ফলই
প্রতিদিন খাবেন। আপেল, আমলকী কিংবা আমড়া সে যা-ই হোক না
কেন।
আরেকটি
প্রয়োজনীয় ছোট টিপস দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে
আধাগ্লাস ঈষদুষ্ণ পানিতে এক চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নেবেন। এই
শীতেও সবার ত্বক হবে লাবণ্যময় আর চুল হবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
No comments:
Post a Comment